সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের জালে সর্বশেষ আটকা পড়েছেন আবদুল জলিল। ক্ষমতাসীন দলের কোনো মন্ত্রী বা সাংসদের বিরুদ্ধে এত দ্রুত কবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল মনে পড়ে না। মাত্র কয়েক দিন আগেও জলিল সাহেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে তার ভাগ্যে দলীয় সভাপতির উপদেষ্টার পদ জুটেছিল। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। বেফাঁস কথা বলে তার এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। নিজেকে ভারসাম্যহীন দাবি করেও কোনো সুবিধা করতে পারেননি। মাত্র চার লাখ টাকা আয়কর ফাঁকির মামলায় তাকে সশরীরে আদালত থেকে জামিন নিতে হয়েছে। দুর্নীতি সে যেই করুক এমনকি ভারসাম্যহীন ব্যক্তিও যদি হন তাহলেও তার রেহাই নেই। তবে জলিল সাহেব মনে হয় ভারসাম্য ফিরে পেয়েছেন, আদালতে মিডিয়ার সামনে কোনো কথাই বলেননি তিনি। কথায় আছে, বোবার শত্রু নেই।
মোটামুটি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই যে কয়েকটি সরকার দেখার সুযোগ হয়েছে তার প্রায় সবক’টিই নির্বাচনোত্তর প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা ত্রুক্রসেডের মতো। কারও কারও মতে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানে এখনও এই ত্রুক্রসেড পুরোমাত্রায় বিদ্যমান। তবে এই ত্রুক্রসেড শুধু রূপ বদলেছে মাত্র। সালাহউদ্দিন বা রিচার্ডরা নেই, নেই ত্রুক্রসেডের মাহাত্ম্যও। ক্ষমতার পালাবদলে আমাদের দুর্নীতিবিরোধী ত্রুক্রসেডের সেনাপতিদেরও বদল হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই মামলা প্রত্যাহারের খবর। আর তা বিশেষ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের। মামলাগুলো যদি এভাবেই প্রত্যাহার হবে তাহলে প্রশ্ন আসে, এই মামলাগুলো কারা, কেন দায়ের করেছিল? তদন্ত হওয়া জরুরি নয় কি? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে মনে শঙ্কিত হই আর কীই-বা করার আছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা মামলাগুলোকে রাজনীতিবিরোধী অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সেনাপতি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধূরী। মাঝে মধ্যে মনে হয়, হাসান মশহুদ চৌধূরীরা পদত্যাগ না করলে আজ ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। দেশের কল্যাণকামী জনগণ সেদিন তাদের সেই স্বল্পকালীন কিন্তু সাহসী ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। মশহুদ সাহেব শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হয়তো আওয়ামী লীগ বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে নিয়ে যে ভুল করেছিল তার পুনরাবৃত্তি করতে চায়নি।
দুদক চেয়ারম্যান দুদককে দন্তহীন বাঘ বলেছেন। শুধু তাই নয়, এর অবশিষ্ট থাবাগুলোও নাকি কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দুদকের সেনাপতিরা কেউ কেউ নিজেরাই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত আর কেউবা পরাস্ত হয়েছেন। দু’জন কমিশনার তো মাফ চেয়ে পরিত্রাণ পেয়েছেন। হাসান মশহুদ অবশ্য সে পথ মাড়াননি, তার মাড়ানোরও কথা নয়। অপেক্ষায় আছি কী হয়। দুদক এখন দন্তহীন বাঘ। ওদিকে চিড়িয়াখানায় আবার বাঘের খাঁচাও সম্প্রতি খালি হয়ে গেছে। কেউ বলতে পারেন, চলুন দুদককে চিড়িয়াখানায় পাঠাই।
দুদক নিয়ে ফেইসবুকে আমার এক বন্ধু দারুণ একটা কথা বলেছেন। তার মতে, মানুষ দিয়ে নাকি আর দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। তার পরামর্শটাও বেশ চমৎকার। সুন্দরবন থেকে একটা দন্তযুক্ত বাঘকে দুদকের চেয়ারম্যান করার পরামর্শ তার। দুর্নীতিগ্রস্তকে চেয়ারম্যানের কক্ষে ছেড়ে দিলেই সমস্যার সমাধান। বাঘের বেতন বা খাবার কোনোটারই অভাব হবে না। দুদক চেয়ারম্যানের বেতন-ভাতা নিয়ে চাইলেও কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, একই সঙ্গে নিশ্চিত হবে স্বচ্ছতাও।
Leave a Reply